ষষ্ঠ শ্রেণী পরিবেশ ও বিজ্ঞান
ষষ্ঠ অধ্যায়:বল ও শক্তির প্রাথমিক ধারণা
গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নের উত্তর
Class 6 Science Chapter 6 (বল ও শক্তির প্রাথমিক ধারণা) all important question answer
এখানে প্রদত্ত ষষ্ঠ শ্রেণীর পরিবেশ ও বিজ্ঞান, ষষ্ঠ অধ্যায়: বল ও শক্তির প্রাথমিক ধারণা -এর সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আছে।
ষষ্ঠ শ্রেণীর বিজ্ঞান: বল ও শক্তির প্রাথমিক ধারণা - আপনার সকল জিজ্ঞাসার সহজ সমাধান!
আমাদের চারপাশের জগৎ অবিরাম গতিশীল, আর এই গতির মূলে রয়েছে বল এবং শক্তির এক অদৃশ্য খেলা। সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমানো পর্যন্ত, এমনকি আমরা যখন শ্বাসপ্রশ্বাস নিই, তখনও বল ও শক্তির ধারণাগুলো কাজ করে। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণীতে এসে যখন 'বল ও শক্তির প্রাথমিক ধারণা' অধ্যায়টি পড়া শুরু হয়, তখন অনেক প্রশ্নই মনের মধ্যে ভিড় করে। স্থির বস্তু কী, গতিশীল বস্তু কাকে বলে, শক্তি কত প্রকারের হয়, বা কেনই বা পৃথিবীর সকল শক্তির উৎস সূর্য – এমন নানা কৌতূহল স্বাভাবিক।
আপনার এই সকল জিজ্ঞাসা মেটাতে এবং পরীক্ষার প্রস্তুতিকে আরও মজবুত করতে, আমরা নিয়ে এসেছি এই বিশেষ ব্লগ পোস্টটি। এখানে ষষ্ঠ শ্রেণীর পরিবেশ ও বিজ্ঞান বইয়ের ষষ্ঠ অধ্যায় 'বল ও শক্তির প্রাথমিক ধারণা' থেকে আসা প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর সহজ ও সরল ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আমরা নিশ্চিত, এই উত্তরগুলো আপনাকে শুধু পরীক্ষায় ভালো ফল করতে সাহায্য করবে না, বরং আপনার চারপাশের জগতকে আরও ভালোভাবে বুঝতে অনুপ্রাণিত করবে। তাহলে চলুন, বিজ্ঞানের এই দারুণ অধ্যায়টির গভীরে প্রবেশ করি এবং বল ও শক্তির প্রাথমিক ধারণাগুলো পরিষ্কার করে নিই!
১) স্থির বস্তু কাকে বলে?
উত্তর:যে বস্তু সময়ের সঙ্গে স্থান পরিবর্তন করে না, তাকে স্থির বস্তু বলে। যেমন- ঘরবাড়ি, গাছপালা প্রভৃতি।
২) গতিশীল বস্তু কাকে বলে?
উত্তর:যে বস্তু সময়ের সঙ্গে স্থান পরিবর্তন করে, তাকে গতিশীল বস্তু বলে। যেমন- চলন্ত ট্রেন, উড়ন্ত পাখি প্রভৃতি।
৩) বল কাকে বলে?
উত্তর:বাইরে থেকে যা প্রয়োগ করে কোনো বস্তুর স্থির অবস্থার বা সরলরেখা বরাবর সমবেগে গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন করা হয় বা করার চেষ্টা করা হয়, তাকে বল বলে।
৪) বলের একক লেখ।
উত্তর:CGS পদ্ধতিতে- ডাইন।
SI পদ্ধতিতে- নিউটন।
৫) স্পর্শহীন বল কাকে বলে?
উত্তর:কোনো বস্তুকে স্পর্শ না করে যদি বস্তুটির উপর বল প্রয়োগ করা সম্ভব হয়, তাকে স্পর্শহীন বল বলে। যেমন- মহাকর্ষ বল, অভিকর্ষ বল।
৬) চৌম্বক পদার্থ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর:চুম্বক যে সকল পদার্থের উপর বল প্রয়োগ করতে পারে অথবা যে সকল পদার্থ চুম্বক দ্বারা আকর্ষিত হয়, তাদের চৌম্বক পদার্থ বলে। যেমন- লোহা, নিকেল, কোবাল্ট প্রভৃতি।
৭) অভিকর্ষ বল কাকে বলে?
উত্তর:যে বলের সাহায্যে পৃথিবী সকল বস্তুকে নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে, তাকে অভিকর্ষ বল বলে।
৮) অভিকর্ষ বলের অপর নাম কি?
উত্তর:ওজন।
৯) SI পদ্ধতিতে ওজনের একক কি?
উত্তর:নিউটন।
১০) যান্ত্রিক শক্তি কাকে বলে?
উত্তর:কোনো বস্তু তার গতি, অবস্থান বা আকৃতি অথবা এই তিনটি কারণেই কার্য করার যে শক্তি লাভ করে, তাকে ঐ বস্তুর যান্ত্রিক শক্তি বলে।
১১) স্থিতি শক্তি কাকে বলে?
উত্তর:কোনো স্থির বস্তু তার আকৃতি ও অবস্থানের জন্য কার্য করার যে সামর্থ্য লাভ করে, তাকে স্থিতিশক্তি বলে।
১২) গতিশক্তি কাকে বলে?
উত্তর:কোনো গতিশীল বস্তু তার গতির জন্য কার্য করার যে শক্তি লাভ করে, তাকে গতিশক্তি বলে।
১৩) গতি কয়প্রকার ও কি কি?
উত্তর:দুইপ্রকার। চলন গতি ও ঘূর্ণন গতি।
১৪) অভিকর্ষের প্রভাবে পতনশীল বস্তুর গতি কি প্রকার?
উত্তর:চলন গতি।
১৫) বায়ুর কোন শক্তিকে কাজে লাগিয়ে পালতোলা নৌকা চালানো হয়?
উত্তর:গতিশক্তিকে কাজে লাগিয়ে।
১৬) কোনো বস্তুর স্থিতি ও গতি আপেক্ষিক, যুক্তিসহ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর:আমাদের চারপাশে বাড়িঘর, গাছপালা সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীপৃষ্ঠের সাপেক্ষে স্থান পরিবর্তন করে না। তাই এরা পৃথিবীপৃষ্ঠের সাপেক্ষে স্থির বস্তু। কিন্তু পৃথিবী নিজেই সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। অর্থাৎ ঘরবাড়ি, গাছপালা প্রভৃতি পৃথিবীর সাপেক্ষে স্থির হলেও পরম স্থির নয়। তাই বলা যায় মহাবিশ্বে পরম স্থিতি বা গতি বলে কিছু নেই। প্রতিটি বস্তু একে অপরের সাপেক্ষে গতিশীল বা স্থির হতে পারে। অর্থাৎ স্থিতি ও গতি আপেক্ষিক।
১৭) পৃথিবীর সকল শক্তির উৎস কি?
উত্তর:সূর্য।
১৮) উদ্ভিদের খাদ্য তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে কে?
উত্তর:সূর্য।
১৯) কত শতাংশ সৌরশক্তি উদ্ভিদের দেহে জমা থাকে?
উত্তর:১০ শতাংশ।
২০) খাদ্য শৃঙ্খল কাকে বলে?
উত্তর:উৎপাদক থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে খাদ্য খাদক সম্পর্কের ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রাণীগোষ্ঠীর মধ্যে খাদ্যশক্তি প্রবাহের যে ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকে খাদ্য শৃঙ্খল বলে।
২১) খাদ্য শৃঙ্খলে শক্তি প্রবাহ কেমন হয়?
উত্তর:একমুখী।
২২) খাদ্যজাল কাকে বলে?
উত্তর:পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন খাদ্যশৃঙ্খলগুলি মিলে জালের মতো যে ছবি তৈরি করে, তাকে খাদ্যজাল বলে।
২৩) খাদ্য পিরামিড কাকে বলে?
উত্তর:বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন পুষ্টিস্তরের সামগ্রিক গঠনকে উৎপাদক থেকে সর্বোচ্চ শ্রেণির খাদক পর্যন্ত ক্রমপর্যায়ে পরপর সাজিয়ে যে পিরামিড গঠিত হয়, তাকে খাদ্য পিরামিড বলে।
২৪) খাদ্য পিরামিডের প্রতিটি স্তরকে কি বলে?
উত্তর:ট্রফিক লেভেল বা পুষ্টিস্তর।
২৫) সর্বভুক শ্রেণির দুটি উদাহরণ দাও।
উত্তর:মানুষ, কাক।
২৬) ১০ শতাংশ সূত্র ব্যাখ্যা করেন কে?
উত্তর:রেমন্ড লিন্ডেম্যান।
২৭) লিন্ডেম্যানের ১০ শতাংশ সূত্রটি লেখ।
উত্তর:প্রতিটি ট্রফিক লেভেলে গৃহীত শক্তির দশ শতাংশ ঐ পুষ্টিস্তরের জীবদের দেহ গঠনের কাজে লাগে যা পরবর্তী ট্রফিক লেভেলের জীবেরা গ্রহণ করতে পারে।
২৮) খাদ্য পিরামিডের এক পুষ্টিস্তর থেকে পরবর্তী পুষ্টিস্তরে খাদ্যের মাধ্যমে যতটুকু শক্তি যায় তার বেশিরভাগ খাদক প্রাণীদের দেহে সঞ্চিত থাকে না। তাহলে শক্তির বেশিরভাগ কোথায় যায়?
উত্তর:খাদ্য পিরামিডের এক পুষ্টিস্তর থেকে পরবর্তী পুষ্টিস্তরে খাদ্যের মাধ্যমে যতটুকু শক্তি যায়, সেই শক্তির কেবলমাত্র ১০ শতাংশ প্রাণীরা নিজেদের দেহ গঠনের কাজে লাগায় বা দেহে জমা রাখে। বাকি ৯০ শতাংশ শক্তি খাদক প্রাণীর নানাপ্রকার শারীরবৃত্তীয় কাজে খরচ হয়ে যায়। তাই শক্তির এই অংশটুকু পরবর্তী পুষ্টিস্তরে পৌঁছাতে পারে না।
এছাড়া পুষ্টিস্তরের অন্তর্গত জীবদের মৃত্যুর পর তাদের পচা গলা মৃতদেহ মাটিতে মিশে গেলে পরবর্তী পুষ্টিস্তরের জীবেরা ওই শক্তি ব্যবহার করতে পারে না।
২৯) শক্তির উৎস কয়প্রকার ও কি কি?
উত্তর:দুইপ্রকার। নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস এবং অনবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস।
৩০) অপ্রচলিত বা নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস কাকে বলে?
উত্তর:যে সকল উৎস থেকে প্রাপ্ত শক্তির ব্যবহার তেমন প্রচলিত নয় এবং যে শক্তির ভাণ্ডার ফুরিয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, তাদের অপ্রচলিত বা নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস বলে। যেমন-সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জোয়ার ভাটা নির্ভর শক্তি ইত্যাদি।
৩১) প্রচলিত বা অনবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস কাকে বলে?
উত্তর:যে সকল উৎস থেকে প্রাপ্ত শক্তিকে বহুকাল ধরে ব্যপক হারে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং যেগুলি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে, তাদের প্রচলিত বা অনবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস বলে। যেমন- কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি।
৩২) সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে তৈরি দুটি যন্ত্রের নাম লেখ।
উত্তর:সৌরকোশ এবং সৌরকুকার।
৩৩) তলের প্রকৃতির উপর কীভাবে ঘর্ষণ নির্ভর করে?
উত্তর:তল যত মসৃণ হয় ঘর্ষণ তত কম হয়।
৩৪) ঘর্ষণের ফলে উষ্ণতার কি পরিবর্তন ঘটে?
উত্তর:উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়।
৩৫) শক্তির রূপান্তরের উদাহরণ দাও।
উত্তর:
•তড়িৎ শক্তি থেকে শব্দ শক্তি- মাইক্রোফোন, মাইক প্রভৃতি।
•তড়িৎ শক্তি থেকে তাপশক্তি- ইলেকট্রিক ইস্ত্রি, বৈদ্যুতিক হিটার প্রভৃতি।
•তড়িৎ শক্তি থেকে যান্ত্রিক শক্তি- বৈদ্যুতিক পাখা চালানো।
•তড়িৎ শক্তি থেকে আলোক শক্তি- বৈদ্যুতিক বাল্ব।
•যান্ত্রিক শক্তি থেকে শব্দশক্তি- বিভিন্নপ্রকার বাদ্যযন্ত্র বাজানো।
•যান্ত্রিক শক্তি থেকে বিদ্যুৎ শক্তি- জলবিদ্যুৎ উৎপাদন।
•যান্ত্রিক শক্তি থেকে তাপশক্তি- দুই হাতের তালু ঘষা।
•যান্ত্রিক শক্তি থেকে রাসায়নিক
শক্তি- দেশলাই বাক্সে বারুদে ঘষে দেশলাই কাঠি জ্বালানো।
•রাসায়নিক শক্তি থেকে তাপ ও আলোকশক্তি- মোমবাতি জ্বালানো।
•রাসায়নিক শক্তি থেকে তাপশক্তি- কয়লা পোড়ানো।